
সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যশোর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রবল গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতা আত্মগোপনে চলে যান, যার মধ্যে ওবায়দুল কাদেরও ছিলেন। এ অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানায় পুলিশ।
এর আগে একই দিন সন্ধ্যায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের গ্রেপ্তারের খবরও পাওয়া যায়।
আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে সবসময় আলোচনায় থাকতেন। ‘খেলা হবে’, ‘অন্তরে জ্বালা’ ইত্যাদি তার আলোচিত উক্তির মধ্যে ছিল।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মোকাবিলায় গত ১৫ জুলাই ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগই যথেষ্ট।’ এর পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়, যেখানে নারী শিক্ষার্থীরাও রক্ষা পাননি। তাদের রক্তাক্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। সমালোচনার মুখে পড়েন ওবায়দুল কাদের এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও গতি পায়।
এদিকে, আন্দোলন দমাতে সরকারের ‘ওপর মহলের নির্দেশে’ পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়, যার ফলে ১৬, ১৭, ও ১৮ জুলাই পুলিশের গুলিতে সরকারি হিসেবে দেড় শতাধিক ছাত্র-জনতা নিহত হয়। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ সংখ্যা দুই শতাধিক বলা হয়েছে। এরপর কারফিউ জারির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে সরকার।
২ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়নি।’ এর আগে কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, পুলিশকে ‘দেখামাত্র গুলি’ চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের প্রথমবারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৯ এবং ২০২২ সালের সম্মেলনেও টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, যা আওয়ামী লীগের ইতিহাসে প্রথম।
ওবায়দুল কাদের নোয়াখালী-৫ আসন থেকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন এবং এরপর একই আসন থেকে আরও তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
ওবায়দুল কাদের ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন এবং ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি মুজিব বাহিনীর কোম্পানীগঞ্জ থানা শাখার অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ করেন। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর তিনি পাঁচ বছর কারাবন্দী ছিলেন। কারাবন্দী অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং দুই মেয়াদে এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন।
সূত্র: বার্তা বাজার